সালতামামি ২০১৬ : আলোচনায় ওসমানীনগর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০১৭, ৭:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
২০১৬ সালের প্রায় পুরোটা সময়েই আলোচনায়। এ বছর ওসমানীনগর উপজেলায় নানা ঘটনা ঘটলেও বেশ আলোচনা-সমালোচনায় ছিল- পিতার হাতে দুই পুত্র খুন, জঙ্গি সাফির পরিত্যাক্ত বাড়ি, ওসি হত্যা মামলায় ১২১ আসামীর জামিন বাতিলসহ অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর আট টুকরো লাশ। এসব ঘটনা এলাকা জুড়ে বেশ আলোচনা সমালোচানার জন্ম দিয়েছে।
অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর আট টুকরো লাশ উদ্ধার:
কাগজপুর ডাইভারশন সড়কের সেতুর নিচ থেকে দুটি কার্টুন ভর্তি অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর উদ্ধার করা লাশ অবশেষে বেওয়ারিশ হিসেবে সিলেটের মানিক পীরের টিলায় দাফন করা হয়েছে। উদ্ধার করা লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। গত ১৪ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কাগজপুর ডাইবেশন সড়কের সেতুর নিচ থেকে দুটি কাগজের কার্টুন ভর্তি তরুণীর ৮ টুকরো লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে লাশের কোন পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে, এ ঘটনায় সিলেটের ওসমানীননগর থানার পুলিশ পরিদর্শক রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে ১৪ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ১৫ ডিসেম্বর সিলেটের আঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে নগরীর মানিক পীরের টিলায় লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে ওসমানীগরের সর্বত্র আলোচানা – সমালোচনার ঝড় বইছে। কে এই হতভাগিনী কি এমন দোষ ছিল মেয়েটার, যার ফলে এভাবে মেরে লাশ টুকরো টুকরো করে দিতে হবে? নিহতের দ্রুত পরিচয় সনাক্তকরনসহ ঘটনার রহস্য খুঁজে বের করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।
পিতার হাতে দুই শিশুপুত্র খুন:
পারিবারিক অশান্তির কারণেই পরিকল্পিতভাবে দুই শিশুপুত্রকে হত্যা করে পিতা ছাতির আলী। পরবর্তীতে ওসমানীনগর উপজেলার চিন্তামনি গ্রামের পরিত্যক্ত এক বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। নিহত শিশু রুজেল (১১) চিন্তা মনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র ও তার ছোটভাই মামুন(৭) একই স্কুলের প্রথম শ্রেণীতে পড়তো। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছাতির আলীকে দুই দিন পর আটক করে থানা পুলিশ। আটকের পর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ছাতির আলীকে নেয়া হয়। সেখানে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেট জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালিয়ে ঘাতক ছাতির আলী জানান, গত ২৪ অক্টোবর রাত ৮টায় ওসমানীনগর উপজেলার চিন্তামনি গ্রামের উত্তর পাশে , সে বড় ছেলে রুজেল ও ছোটো ছেলে মামুনকে নিয়ে স্থানীয় চণ্ডিহাওরে মাছ ধরতে যায়। দুপুরের পর সে বড় ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে ছোটো ছেলে মামুন মিয়াকে খুন করে। আর মামুনের লাশ ডোবার পানিতে চুবিয়ে রেখে হাওরের কাছে বসে থাকে। এমন সময় বড় ছেলে রুজেল গিয়ে মামুন কই জিজ্ঞেস করে। এ সময় সুরকি নিয়ে রুজেলের উপর হামলা চালায়। রুজেলের মাথার পেছনের অংশে উপর্যুপরি আঘাত করলে সে লুটে পড়ে। পরে সুরকি দিয়ে তার গলায় আঘাত করা হয়।
ওসমানীনগরের সাফির পৈত্তিক পরিত্যাক্ত বাড়িটি ঘিরে আতঙ্ক:
দয়ামীর ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের সফিউর রহমানের পুত্র সাফি। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা চালানোর হুমকি দেয়ার ঘটনায় পরিচয়ও পাওয়া তিন যুবকের মধ্যে এক জন। সাফির পিতা সফিউর রহমান ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন সহ চাকরীকালিন সময়ে তিনি সরকারের বিভিন্ন পদে দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন। সফিউর রহমানের পুত্র সাফি দেশে জঙ্গি হামলা চালানোর হুমকি দেয়ার ঘটনায় সাফির পৈত্তিক পরিত্যাক্ত বাড়িটি নিয়ে এলাকাবাসী রয়েছেন আতঙ্কে। পরিত্যাক্ত এ বিশাল বাড়িটি স্থানীয়দের এক অজানা আতঙ্ক। সফিউর রহমানের বিশাল এ বাড়ির দেখাশোনা করেন জাহেদ উল্লা। তিনি শুধু দিনের বেলা এ বাড়িতে এসে দেখাশুনা করেন। বিশাল এ বাড়িটি অনেক দিন থেকে পরিতাক্ত রয়েছে এ বাড়িতে কাউকে আসা যাওয়া করতে দেখা যায় না তবে কিছু দিন আগে পুলিশ আসায় সফিউর রহমানের পুত্র সাফি জঙ্গি সংষ্টিতার সাথে জড়িত রয়েছে তা এলাকাবাসী জানতে পেরে সবার মনে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ওসি মোস্তাফিজ হত্যা মামলায় চেয়ারম্যানসহ ১২১ জনকে কারাগারে প্রেরণ:
ওসমানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান নিহতের ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ১২১ আসামিদের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছিলেন আদালত। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট নজরুল ইসলামের আদালতে আসামিরা জামিল আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ আদেশ দেন।
২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর উপজেলার গোয়ালাবাজারে অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার সময় ওসমানীনগর থানার তৎকালীন ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যাপক টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান অসুস্থ হন। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমাম মানিকসহ রাজনৈতিক নেতা ও অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাসহ সহ অজ্ঞাতনামা অন্তত ৮’শ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা (৯/২০১৪) দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) অকিল উদ্দিন আহমদ ১৩১ অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসিট প্রেরণ করেন। এবং ১৫জনের অব্যাহতি প্রার্থনা করে আদালতে চার্জসিট দাখিল করেন।
পরবর্তীতে মামলাটি পূনঃতদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক এমরান হোসেন মামলাটি তদন্ত পূর্বক ১৩৮জনকে অভিযুক্ত করে গত ১৮ আগষ্ট আদালতে নতুন চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা তারিখে চার্জসিট শুনানিকালে মামলার নতুন চার্জসিটের ১৩৮ জন আসামীর মধ্যে উপস্থিত থাকা গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক, শ্রমিক নেতা জিলু মিয়া, বিএনপি নেতা গয়াস মিয়া, পিয়ার আলীসহ ১২১ জনের জামিন বাতিল করে জেলখানায় পাঠানোর নির্দেশ দেন সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল আদালত-১ এর বিচারক।