জীবনযুদ্ধে জয়ী ওসমানীনগরের আলেছা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২:২১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
অভাব আর অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে যখন পরাজয়ের পথে ঠিক তখনই জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খা। দৃঢ় মনোবল এবং অদম্য চেষ্টার ফলে শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন হতদরিদ্র স্বামী। ঠিক সেই সময় হাঁস পালন করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন সিলেটের ওসমানীনগরের সাদীপুর ইউপির রহমতপুর গ্রামের কৃষক রাহিদ মিয়ার স্ত্রী আলেছা বেগম (৪৫)।
আলেছা বেগমের জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার সহযাত্রী হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল এনজিও সংস্থা মুসলিম এইড ইউকে। এনজিও সংস্থাটির স্থানীয় অফিস থেকে কয়েক কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। ভাগ্যবিপর্যয়ে চরম হতাশা, অভাব-অনটন আর দুর্ভোগের পরও কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা নিয়ে হাঁস পালন করতে থাকেন। ধীরে ধীরে আসতে থাকে হাঁসের খামার থেকে সফলতা। একপর্যায়ে দারিদ্র্যকে পরাজিত করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেন আলেছা বেগম।
আলেছা বেগমের হাঁসের খামারে গেলে তিনি জানান, তার খামারে বর্তমানে হাঁসের সংখ্যা ৬৬০টি। শুধু দেখভাল করার মধ্যদিয়ে হাওরের জল-প্রকৃতিতে বেড়ে উঠছে হাঁস। বর্ষা মৌসুমে হাঁস পালন করতে বাড়তি কোনো খরচ হয় না। কারণ জলাভূমি থেকেই হাঁস খাদ্য সংগ্রহ করে। জলাভূমির শামুক হাঁসের প্রধান খাদ্য। শুষ্ক মৌসুমে শুধু হাঁস বাড়িতে পালন করতে হয়। আর তখন খামারে হাঁসের খাদ্য দিতে কিছুটা খরচ হয়। বর্তমানে তার খামারে হাঁস প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০টি ডিম দিচ্ছে। আগামী কার্তিক মাস থেকে তার হাঁসগুলো ৬ মাসে অন্তত প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ ডিম দেবে বলে তিনি আশা করেছেন।
তিনি নিজের সামান্য পুঁজি এবং এনজিওর কাছ থেকে প্রথমে ঋণ নিয়ে শুরু করেন হাঁসের খামার। এভাবে চারবারে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৬৬০টি হাঁস নিয়ে খামার গড়ে তুলেন আলেছা। দু’বছরের মাথায় এনজিও সংস্থার ঋণ শোধ করে এখন তিনি নিজস্ব পুঁজির মালিক। বর্তমানে তার হাঁসের বাজারমূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। তিনি হাঁসের ডিম ও হাঁস বিক্রি করে পরিবারের খরচ সামলানোর পরও একটি অংশ সঞ্চয় করছেন। ইতিমধ্যে খামারের আয় থেকে পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। অন্যরা পড়া-লেখার পাশাপাশি হাঁস পালনে তাকে সাহায্য করে।